প্রচ্ছদ

বাংলাদেশে খুলে দিয়ে লাভের থেকে ক্ষতি হচ্ছে বেশি?

  |  ১৪:২০, জুন ০৩, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual7 Ad Code

মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধি :

অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্য ৩১শে মে থেকে সরকার সকলকিছু খুলে দিয়েছে। সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ স্বাভাবিক কর্মসংস্থানের জন্য যা যা প্রয়োজন তা সবই খুলে দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহন চালু হয়েছে। কিন্তু যে লাভের আশায় সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে, সেই লাভের চেয়ে ক্ষতির শঙ্কা বেশি দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন যে, আর কিছুদিন যদি সবকিছু বন্ধ থাকতো তাহলে বাংলাদেশ লক ডাউনের সুবিধাটা পেতে পারতো। কিন্তু এখন সবকিছু খুলে দেওয়ার ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যেরকম বেড়েছে, তেমনি অর্থনীতিতে বিপরীত যাত্রার প্রবণতাও বেড়েছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে যে, করোনার সঙ্গে বসবাসের যে কৌশল সরকার নিয়েছে তা তিনদিনের মধ্যেই পাঁচটি চাল্যেঞ্জের মুখে পড়েছে।

Manual6 Ad Code

১. জনস্বাস্থ্যের হুমকি

Manual7 Ad Code

করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ সীমার মধ্যেই সবকিছু খুলে দেওয়ার ফলে জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে, আইসিইউ বেড খালি নেই, মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে আরো খারাপ পরিস্থিতি আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে যত রোগীর সংখ্যা বাড়বে তত মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা বাড়বে এবং সঙ্কট ঘনীভূত হবে।

২. চাকরিচ্যুত বেড়েছে

Manual6 Ad Code

গত ৩ দিনে যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে, সেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক চাকরীচ্যুতের ঘটনা ঘটছে। অনেকে দূরদুরান্ত থেকে অফিসে এসে দেখছেন তাঁর চাকরি নেই এবং বলা হচ্ছে যে, অফিসগুলো এখন সীমিত পরিসরে চালানো হবে তাই এখন তাঁদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা তাঁদেরকে সাময়িকভাবে ছাঁটাই করা হচ্ছে। এরকম ঘটনা ঘটছে ক্ষুদ্র-মাঝারিসহ প্রায় সকল বেসরকারি অফিসগুলোতে। এইসকল প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, এখন অনিশ্চয়তার সময় চলছে। কাজেই তাঁদের নিজেদের টিকে থাকার জন্যেই যত কম সংখ্যক লোকবল নিয়ে কাজ করা যায় তত কম সংখ্যক লোক নিয়ে কাজ করার পক্ষপাতী তাঁরা। করোনা উদ্যোক্তাদের একটি বিষয় শিখিয়েছে তা হলো এত বড় অফিস, এত লোকের দরকার কি? বরং যত ছোট করে পারা যায় ততই ভালো। আর একারণেই ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অনেকেই নতুন করে বেকারত্বের মুখে পড়ছেন।

৩. মালিকরা বেতন দিচ্ছেন না

দুই মাস পরে অফিস খুলেছে। কর্মচারীরা যখন অফিসে ফিরেছে তখন মালিকরা বলছেন যে, এখন তো অবস্থা খুব খারাপ, সবকিছু একটু স্বাভাবিক হোক, ঠিকঠাক হলেই বেতন দেবো। গত দুই মাস যারা ধারকর্য করে চলেছেন তাঁরা তাই পড়েছে নতুন সঙ্কটের মধ্যে। বেতন না পেলে তাঁরা ধার শোধ কিভাবে করবেন সেটা যেমন এক প্রশ্ন, তাঁর থেকেও বড় প্রশ্ন হলো তাঁরা চলবেন কি করে? আর এই অনিশ্চয়তার কারণে মালিকদের উপরেও যে তাঁরা চড়াও হবেন এমন সাহস বা সুযোগ তাঁদের কাছে নেই।

Manual7 Ad Code

৪. বাস ভাড়া মরার উপর খরার ঘা

এই সময় ৬০ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধি যেন মরার উপর খরার ঘা। বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির নামে প্রায় দ্বিগুণের বেশি করা হয়েছে এবং এইকারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ নতুন আরেক সঙ্কটে পড়েছে। এই দিকে উবার বা পাঠাও বন্ধ থাকার কারণে বাসেই সবাইকে যাতায়াত করতে হছে। বাসে চলাচল যেমন ঝূকিপূর্ণ, তেমনি এই সঙ্কটের বাজারে যাত্রীদের বাড়তি পয়সা গুনতে হচ্ছে। এটা আরেকটি সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৫. অপেক্ষার কৌশলে বড় ব্যবসায়ীরা

সবকিছু খুললেও বড় ব্যবসায়ীরা এখনো হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। তাঁরা আরো দেখতে চাইছে, অপেক্ষা করতে চাইছে। তাঁরা মনে করছে যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি সহসা না থামলে বড় বিনিয়োগ অর্থহীন এবং এই বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। একজন ব্যবসায়ী বলেছেন যে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হবেনা। কাজেই আমাদের এখন কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর এই পর্যবেক্ষণ শেষ পর্যন্ত কতদিনে গড়াবে সেটা এখন দেখার বিষয়।

এই কারণেই যে প্রত্যাশা এবং আশাবাদ নিয়ে সরকার সবকিছু খুলে দিয়েছিল, সেই আশাবাদ এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। তবে সামনের দিনগুলোতে দেখা যাক পরিস্থিতি কতটুকু স্বাভাবিক হয়।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code