প্রচ্ছদ

বিদেশ প্রত্যাগতদের সহায়তা প্রকল্প

  |  ২৩:৫৭, আগস্ট ২৪, ২০২১
www.adarshabarta.com

Manual3 Ad Code

৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা অনুমোদন ৫০ বছরে ২৩২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স আয়

Manual3 Ad Code

আদর্শবার্তা ডেস্ক :
বৈশ্বিক করোনা মহামারির দরুন বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের সমাজে পুনর্বাসনে সহায়তা করার লক্ষ্যে ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার টাকার তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প শিগগিরই চালু হচ্ছে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশের মাটিতে কঠোর পরিশ্রম করে দেশে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠান তারা করোনা মহামারির ছোবলে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এখন অনেকেই পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের ১৭৫টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখের অধিক বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন। সা¤প্রতিক বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশে কর্মরত কর্মীরা কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী কর্মী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। এখনো প্রবাসী কর্মীদের দেশে ফেরা অব্যাহত রয়েছে। ফেরত আসা এসব কর্মীরা দেশে আসার পর অধিকাংশই কর্মহীন অবস্থায় আছেন। অর্থকষ্টসহ নানা ধরনের সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। আর্থিক কারণে সমাজে তারা নানা ধরনের প্রতিক‚ল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রত্যাগত কর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করলে তারা পুনরায় দারিদ্র্য সীমায় চলে যাবে এবং নানা রকম অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে। এ বাস্তবতায় ফেরত আসা বিপুল সংখ্যক কর্মীদের সমাজে পুনঃএকত্রীকরণ তথা পুনর্বাসনে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনে সহায়তামূলক এ প্রকল্পে কার্যক্রম পুরোদমো শুরু হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের সার্বিক কল্যাণে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী কর্মীদের সার্বিক উন্নতি কল্যাণ এবং বিদেশে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়, আর্থিক অনুদান প্রদানসহ নানাবিধ সেবা নিশ্চিত করাই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কাজ।
প্রত্যাগত এসব প্রবাসী কর্মীদের মাঝে ২৭০ কোটি টাকা নগদ প্রণোদনা দেয়া হবে। সারা দেশে অভিবাসী অধ্যুষিত জেলাসমূহে ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এসব ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে ৬৪টি জেলায় প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বিশ্ব ব্যাংক উল্লেখিত প্রকল্পের অধিকাংশ আর্থিক যোগান দিবে।
বিদেশ ফেরত আসা বিপুল সংখ্যক কর্মীদের সমাজে পুনঃএকত্রীকরণ তথা পুনর্বাসনে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ জুলাই একনেক সভায় অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। বিশ্ব ব্যাংক উল্লেখিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪২৫ কোটি টাকা আর্থিক যোগান দিচ্ছে। বাকি অর্থ সরকার নিজস্ব কোষাগার থেকে দিচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণ বা পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দু’লাখ প্রত্যাগত কর্মীকে ওরিয়েনটেশন ও কাউন্সেলিং প্রদান পূর্বক নগদ অর্থ সহায়তায় (প্রণোদনা) জনপতি সাড়ে ১৩ হাজার টাকা করে ২৭০ কোটি টাকা দেয়া হবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স। যা দেশের উন্নয়নে বিশাল ভ‚মিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ প্রবাসী নিরন্তর দেশের উন্নয়নে ভ‚মিকা রেখে চলেছে। এসব প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থানীয় সকল পর্যায়ে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
গত রোববার নিউইয়র্ক শহরে ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত অর্থনৈতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট হোটেলে আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবাসীদের অবদান’ শীর্ষক এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ লিটন আহমদ। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক জানান, অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপন ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসায়ের উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্তকরণ করা হবে। প্রত্যাগতদের পুনঃএকত্রীকরণ ও পুনরায় বিদেশ গমনে সহায়তা প্রদান করা হবে।
এছাড়া প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের ডাটাবেইজ তৈরি এবং অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণমূলক সেবা জোরদার করা হবে। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্পের অধীনে যেসব জেলায় ওয়েলফেয়ার সেন্টার নির্মাণ করে বিদেশ প্রত্যাগতদের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে তা হচ্ছে- ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ফেনী, নেয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, সিলেট, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, পটুয়াখালী, রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাঁকুরগাঁও।
(দৈনিক ইনকিলাব)।

Manual8 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code