প্রচ্ছদ

করোনা মোকাবিলায় উল্টো পথে সুইডেন!

  |  ১৫:৩৯, এপ্রিল ৩০, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual3 Ad Code

আদর্শবার্তা ডেস্ক :

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন লকডাউনে, তখন ভিন্ন পথে হেঁটেছে সুইডেন। মহামারির মধ্যেও সুইডেনের রাস্তায় মানুষের ব্যস্ততা, রেস্তোরাঁয় মানুষের জমায়েত দেখে বিশ্ববাসী অবাক হয়েছে। সুইডেনের এমন কৌশল নিয়ে বির্তক থাকলেও স্পষ্টভাবে করোনার বিস্তার ঠেকাত এটা কতখানি কার্যকর তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, অন্যান্য নর্ডিক দেশে দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চললেও একমাত্র ব্যতিক্রম সুইডেন। স্কুল, সেলুন, রেস্তোরাঁ সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। অধিকাংশ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করলেও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই খোলা।

Manual8 Ad Code

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি সুইডেনে মৃত্যুর হার ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেড়েছে। দেশটিতে প্রতি ১ লাখে ২১ জনেরও বেশি করোনায় মারা গেছেন। অন্যদিকে, লকডাউনে থাকা ডেনমার্কে প্রতি লাখে ৭ জন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে প্রতি লাখে ৪ জনেরও কম মানুষ করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে।

সুইডেনে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৬৪০। মারা গেছেন ২ হাজার ১৯৪ জন।

অন্যদিকে, ৫৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ ডেনমার্কে আক্রান্ত ৮ হাজার ৭৭৩, মারা গেছেন ৪২২ জন। নরওয়েতে ৫৪ লাখ জনগণের মধ্যে আক্রান্ত ৭ হাজার ৪৪৯, মারা গেছেন ২০২ জন। ফিনল্যান্ডে ৫৫ লাখ জনসংখ্যায় আক্রান্ত ৪ হাজার ৫৭৬ এবং মারা গেছেন ১৯০ জন।

মজবুত চিকিৎসা ব্যবস্থা

কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জঁ আলবেয়ার জানান, এটা স্পষ্ট যে, অন্যান্য দেশের তুলনায় সুইডেনে মৃতের সংখ্যা বেশি। কারণ এখনো পর্যন্ত সুইডেনে কঠোর লকডাউন চালু হয়নি।

তিনি বলেন, ‘সুইডেন মনে করে, করোনার বিস্তার ঠেকাতে আংশিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। করোনা ঠেকানোর একমাত্র পথ হলো প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কারণ এখনো ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়নি। অন্যান্য দেশ যেসব কৌশল নিয়েছে তা সব দেশের জন্য কার্যকর কিনা সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। সত্য কথা হলো, কেউই এখনো জানে না সঠিক কৌশল কোনটা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব। তার মানে এই না যে, সংক্রমণ একেবারে শূন্য হয়ে যাবে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রয়োজন মজবুত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। আক্রান্তদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করতে পারলে কোনো ব্যবস্থা নিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’

জঁ আলবেয়ারের মতো সুইডেনের প্রায় সব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাই মনে করেন, করোনা মোকাবিলায় মজবুত স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।

গত ১ এপ্রিল দেশটিতে বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শন বন্ধ করা হয়। গত ৭ এপ্রিল সুইডিশ স্বাস্থ্য বিভাগ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ থেকে বিরত ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেয়।

Manual8 Ad Code

সুইডিশ ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ইকোনোমিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিটার লিন্ডগ্রেন বলেন, ‘প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ছিল। এখনো আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যথেষ্ট মজবুত। আমার ধারণা, আমাদের একমাত্র ব্যর্থতা হচ্ছে বয়স্কদের যথেষ্ট সুরক্ষিত করতে না পারা। বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে কোনোভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে আর এ কারণেই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।’

রাষ্ট্রীয় মহামারি বিশেষজ্ঞ আদ্রেঁ টেগনেল বলেন, ‘আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তার অনেকটাই পেরেছি। সুইডেনের স্বাস্থ্য বিভাগ যথেষ্ট চাপের মধ্যে তাদের কাজ করলেও এখনও পর্যন্ত কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়নি।’

কেন ভিন্ন কৌশল

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, মে মাসের শুরুতে স্টকহোমের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। পরবর্তীতে সংস্থাটি গবেষণায় ভুলের কথা জানিয়ে বলেন, ‘সুইডেনের ২৬% বাসিন্দার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হবে।’

অনেক প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীই ধারণা করছেন, সুইডেনে মৃত্যুর হার আরও বাড়তে পারে।

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক অধ্যাপক জোহান জিয়েসেক বিশ্বাস করেন স্টকহোমের অন্তত অর্ধেক মানুষ মে মাস শেষ হওয়ার আগে ভাইরাস সংক্রমিত হবে।

স্টকহোম ইউনিভার্সিটির গণিতবিদ টম ব্রিটন মনে করেন, সুইডেনের অর্ধেক মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।

সুইডেনের মহামারি বিশেষজ্ঞ ও লেখক এমা ফ্রঁস বলেন, ‘সার্সসহ অন্যান্য করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। দীর্ঘ সময়ের না হলেও যদি স্বল্পমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি হয়ে থাকে সেটিও মহামারি থামানোর জন্য যথেষ্ট।’

Manual7 Ad Code

এমা মনে করেন, কঠোর লকডাউনে থাকা মানুষের তুলনায় সুইডিশদের মধ্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।

তিনি জানান, ভ্যাকসিন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সুইডিশ জনগণের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হলে সেটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

অধিকাংশ দেশেই রাজনৈতিক নেতাদের সংবাদ সম্মেলন করে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরতে দেখা গেলেও সুইডেনের অধিকাংশ সংবাদ সম্মেলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. টেগনেল।

সুইডেন অন্যান্য দেশের মতো কঠোর লকডাউনে গেলে মৃতের সংখ্যা কম হতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে এর উত্তর দেওয়া কঠিন। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশই বৃদ্ধাশ্রমে ছিলেন। আমরা এখন বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’

Manual5 Ad Code

সুইডেনের এই ব্যতিক্রমী কৌশল কতখানি সফল বা ব্যর্থ তা এখনই স্পষ্টভাবে বলা যায় না। তবে, অধিকাংশ সুইডেনের প্রবাসী নাগরিকরা মনে করছেন আরও কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে মৃতের হার কমানো যেত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অনলাইন সংগৃহীত

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code