প্রচ্ছদ

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান-এর সাক্ষাৎকার

  |  ০৭:৫৩, জুন ২৪, ২০২০
www.adarshabarta.com

অক্ষয় সংগঠন আওয়ামী লীগ

মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধি :

প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্ণ করলো আওয়ামী লীগ। এই উপলক্ষে আমাদের নতুন সময়কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, একটি অক্ষয় সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থান করে নিয়েছে। স্বাধীনতা লাভ আওয়ামী লীগের রাজনীতির ফসল, এই অর্জন কেউ নিতে পারবে না।

পঁচাত্তরের পর সভাপতি শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় আওয়ামী লীগকে নতুন প্রজন্মের আধুনিক একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে রূপান্তর করেছেন

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা লাভ আওয়ামী লীগের রাজনীতির ফসল। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এর চেয়ে বড় ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা নেই। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সম্মেলনে আমরা নতুন নেতৃত্ব পেয়েছি। নবীন ও প্রবীণ নেতৃত্বের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। একাত্তর বছরে অনেক চড়াই-উৎরায় পেরুতে হয়েছে দলটিকে। বিভিন্ন সময় এই আওয়ামী লীগকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়েছে বা ভাগ করা হয়েছিলো, তাকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ঠিকই নিজের মতো করে রাজনীতিতে একটা জায়গায় করে নিয়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা তো ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যা। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা আসতে পারতেন, তাদের ৩ নভেম্বর হত্যা করা হয়। এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য, বিভক্ত ও বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে এলেন। দলের হাল ধরলেন। তারপর থেকেই আসলে আওয়ামী লীগে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্রটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলো, তার পুরোটাই হাতছাড়া হয়ে যায় পঁচাত্তরের পনের আগস্ট হত্যার পর। কারণ সেদিন শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বা জাতির জনককেই হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশের অস্থিত্বকে অর্থ্যাৎ বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তর করা হয়। যে আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছে, ঐতিহাসিকভাবে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে আসছে, ষাটের দশক থেকে সকল অপশক্তি ক্ষমতা দখল করে পনের আগস্টের পর। সেখান থেকে আওয়ামী লীগকে দেশ, মানুষের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনা অনবদ্য ভ‚মিকা রেখেছেন।

উপমহাদেশের যেসব পরিচিত রাজনৈতিক দল সনাতনভাবে জাতীয় সম্মেলন করে তা থেকে একটু ব্যতিক্রমভাবে হয় আওয়ামী লীগের প্রায় প্রতিটি জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি জাতীয় সম্মেলনই রাজনৈতিক কোনো একটা প্রস্তাবনা বা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার একটা দিকনির্দেশনা ঘোষণা হিসেবে আসে। পাকিস্তান আমলের শুরু থেকে যেসব সম্মেলন হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধিকার, স্বায়ত্বশাসন, ছয় দফার প্রস্তাবগুলো ষাটের দশক থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে এসেছে। আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা যখন এলো তখন অনেকেই বললেন, তা হঠাৎ করেই এসেছে। কিন্তু আমরা যদি পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন সময়ের সম্মেলনগুলোর দিকে তাকাই, প্রতিটি সম্মেলনের রাজনৈতিক ঘোষণা যদি দেখি, তাহলে দেখবো সমাজতন্ত্র রাষ্ট্রায়াত্বকরণ। অর্থ্যাৎ বড় বড় কলাকারখানা, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স রাষ্ট্রায়াত্ব করতে হবে। রাষ্ট্র যে ধর্মনিরপেক্ষ হবে, তা তো ১৯৪৯ সালে যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ হয়ে গেলো, তখনই তা বাস্তব ছিলো।

আওয়ামী লীগ একটি গণমানুষের দল। বিভিন্ন সময় বহু শ্রোত এসে আওয়ামী লীগে মিশে গেছে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা, অসম্প্রাদায়িকতা, বাঙালির যে ইতিহাস-ঐত্যি তা ধারণ করে এগিয়েছে। কিছু কিছু বিচ্যুতি আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ধরনের ঝাঁপটা এসেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অকৃত্রিম অবস্থান যেমন অসম্প্রদায়িক, অগ্রসরমান, প্রগতির চিন্তা-চেতনা ও উন্মুক্ত গণতন্ত্রে ফিরে গেছে বাংলাদেশ।

অনেক বাধাবিপত্তি থাকা সত্তে¡ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক তুচ্ছ একটা অভিযোগ তুলে চলে গিয়েছিলো, পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নে সহযোগিতা করেনি। বলতে গেলে তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করছে বাংলাদেশ। এই যে অসাধারণ সাহস ঘুরে দাঁড়ানোর, এমনটি কয়টি জাতি করতে পেরেছে? সব প্রতিক‚লতার বিরুদ্ধে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর যে সাহস তা যুগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আমরা উন্নতি করছি। কিন্তু করোনা সংকটে কিছুটা গতিরোধ হয়েছে, কিন্তু আমরা দমে যাবো না, এগোবেই। তবে মনে রাখতে হবে, আমাদের শুধু মাথাপিছু আয় বাড়ালেই হবে না, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ চর্চা করতে হবে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না সকলে মিলেই বাংলাদেশ। আমাদের মিলেমিশে থাকতে হবে।

সমাজে এখনো অনেক বৈষম্য আছে। গরিব-ধনীর মধ্যে বৈষম্য কমানোর জন্য অনেক কাজ করার আছে। আমরা সবাইকে নিয়ে ধনী হবো, এই প্রত্যয় থাকতে হবে।