প্রচ্ছদ

স্মৃতির জানালায় মাওলানা আব্দুল জব্বার

  |  ০৭:৫৯, জুলাই ২১, ২০২২
www.adarshabarta.com

 

স্মৃতির জানালায় মাওলানা আব্দুল জব্বার

……….মোহাম্মদ আজফর উদ্দিন………

 

মাওলানা আব্দুল জব্বার সিলেট জেলার
বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়ন -এর অলংকারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জাবিদ আলী।

মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেব ছোটবেলা অত্যন্ত মেধার স্বাক্ষর রেখে প্রাইমারি স্কুল পাশ করেন। সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল,ফাজিল, ও আলিম (টাইটেল) পাস করেন‌। এছাড়াও তিঁনি সিলেট সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে ডিগ্রী পাস করেন। একথা বলা যায় তখনকার দিনে প্রতিকূলতার মধ্য ধর্মপ্রাণ, শিক্ষিত, শিক্ষানুরাগী সর্বগুণে গুণান্বিত তাঁর মতো একজন অসাধারণ মানুষ খুঁজে
পাওয়া কঠিন ।

এমনকি আজকের একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বিশ্বনাথ থানায় এরকম একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি তেলিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। অতঃপর পদোন্নতি পেয়ে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে থানা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি তেলিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনে তেতলির নাছির মিয়ার বাড়িতে একাধারে ২২ বছর লজিংগে ছিলেন। এই অসাধারণ মহান মানুষ ধর্মীয় কাজ, সমাজ সংস্কারমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। লজিংয়ে থাকা অবস্থায় তেতলী ইউনিয়ন তথা তেতলি গ্রামের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেমন ওয়াজ মাহফিল,ইসলামী অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করতেন। তিনি নিজেই প্রায় শুক্রবারে তেতলি মসজিদে খুতবা পাঠ করতেন। তিনি অত্র এলাকার অনেক গরীব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ দেশে-বিদেশে বড় বড় পদে চাকরিতে আছেন।

তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা আজও তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন। তেতলি গ্রামের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা মাসলা-মাসায়েল জানার জন্য আসলে তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের সমাধান দিতেন। তার জীবনের উল্লেখযোগ্য কাজ হলো তেলিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলাম নগর, সুনামগঞ্জ বাইপাস রোডের দক্ষিণ পাশে যে মসজিদটি রয়েছে সেটি তার জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কষ্টের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে ।

মসজিদ নির্মাণের জন্য এই সৎ এবং ধর্মপ্রাণ মানুষটি নিজেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে দশ পয়সা, পাচ পয়সা,একটাকা ,দুইটাকা এভাবে টাকা উঠাতেন। এই মহান কাজের জন্য মানুষ আজ (A.T.E.O) সাহেবকে সম্মান ও শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে।
উল্লেখ্য পূর্ব অলংকারি জামে মসজিদে ইমাম নিয়োগের সময় এ মানুষটি কুরআন ও হাদিসের আলোকে ধর্মীয় জ্ঞান পারদর্শীতার মাধ্যমে সঠিক যাচাই-বাছাই করে ইমাম নিয়োগের দায়িত্ব পালন করতেন। সৎ ন্যায়পরায়ণ ও প্রচার বিমুখ এ মানুষটি জীবনে কখনো ঘুষ গ্রহণ করেননি। দূর্ণীতি ও অন্যায় কে প্রশ্রয় দেননি। তিনি যখন বিদ্যালয় পরিদর্শনে যেতেন তখন কোনো অনিয়ম বা ত্রুটি দেখলে নিজেই পদের ক্ষমতাবলে শিক্ষকদেরকে ভর্তসনা ও হয়রানি করতেন না। বরং সুন্দর বাক্যলাপ, সুপরামর্শ ,শিক্ষার মানোন্নয়ন,সঠিক দিক নির্দেশনা ও অমায়িক ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝিয়ে বলতেন। গুণাবলী সম্পন্ন এই মানুষটি নিজের সম্পর্কে ছিলেন সম্পূর্ণ প্রচারবিমুখ। তিনি কখনোই নিজের পদ ও যোগ্যতাকে ব্যবহার করে নিজেকে প্রকাশ করতেন না। অতি সাধারণ জীবন যাপন,সাবলীল ব্যবহার,সততার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে সব সময় নিজেকে মিশিয়ে রাখতেন । এই মানুষটির কৃতিত্বের কথা এখানেই শেষ নয়। তিনি জেলা-উপজেলা এমনকি তার নিজের এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতেন।

দৃষ্টান্তস্বরূপ সফাত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণের অনুমোদন এই মানুষটির অক্লান্ত চিন্তা ও পরিশ্রমের ফসল। তাছাড়া অলংকারী পোস্ট অফিস নির্মাণ ও তার অসাধারণ কৃতিত্ব বলা যায় ।বলাই বাহুল্য যখন অলংকরী গ্রামে প্রথম পোস্ট অফিস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয় তখন মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেবের সাথে তেলি বাজার সংলগ্ন আহমদ পুর গ্রামের খন্দকার আব্দুল মালিক ও তাহার ভাই মুক্তার সাহেবের খুব আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আর এমপি সাহেবের ভাই ছিলেন সারা বাংলাদেশের পোস্ট অফিসের প্রধান। তিনি ঢাকায় থাকতেন।তখন এ.টি.ই.ও. সাহেব গ্রামের আরও দুই তিন জনকে নিয়ে বিমান যোগে পোস্ট অফিস গ্র্যান্ড এর জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পরের দিন পোস্ট অফিস গ্র্যান্ড এর জন্য লিখিত কপি নিয়ে সিলেটে ফিরেন। জনাব আবদুল জব্বার সাহেব অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,মাদ্রাসা ইত্যাদি নির্মাণে অনেক পরিশ্রম ও চেষ্টা করে গেছেন। এই মানুষটির এত মানবিক গুণাবলী আর সমাজ সংস্কার মূলক কর্মকান্ডের কথা লিখে বলে শেষ হওয়ার নয়।তার ধর্মপরায়ণতা,সহিষ্ণুতা,বিপদের সময় মানুষের কাছে এগিয়ে আসা, প্রয়োজন অর্থ দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করা,সর্বোপরি মানুষের কল্যাণ সাধনই ছিল তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।মৌলানা আব্দুল জব্বার সাহেব সিলেট জেলা বিশ্বনাথ উপজেলা ও অলংকারী ইউনিয়ন বাসীদের মনে চির অম্লান ও চির অমর হয়ে আছেন। পুরো এলাকাবাসী তাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে এবং আজীবন করবে ।
পরিশেষে বলব তার, সত্যবাদিতা, সততা,কর্তব্যনিষ্ঠা,উদারতা ,সহমর্মিতা, মহানুভবতা,ক্ষমাশীলতা,দক্ষতা ছিল তার জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও দোয়া কামনা করি।

মোহাম্মদ আজফর উদ্দিন
সহকারী শিক্ষক, দয়ামীর উচ্চ বিদ্যালয়