প্রচ্ছদ

আমার ঊনপঞ্চাশপবন ও আত্মজীবনীর খসড়া

  |  ০২:৩৯, জুলাই ০৭, ২০২২
www.adarshabarta.com

 

আমার ঊনপঞ্চাশপবন ও আত্মজীবনীর খসড়া
#সাইফুর রহমান কায়েস#

ছবির মানুষটির আসল জন্মদিন ৭ই জুলাই। সে হিসেবে রাত বারোটা এক সেকেন্ড থেকেই ক্লকওয়াইজ তিনি ঊনপঞ্চাশ বর্ষে পা রাখলেন।
অখ্যাত, অগণ্য মানুষটির বেচে থেকে কিছুঅক্সিজেন নাশ করা ছাড়া আর কোনো ক্রিয়ারই প্রতিফলন কেউ দেখে নি। প্রচলিত যে অর্থে মানুষ বুঝায় তিনি তার বিপরীত।

বারবার ফিরে পাওয়া জীবন নিয়ে চলছে তার জীবন। উনার ফিলিপিনো এক বান্ধবী, রিসাল ভার্সিটির শিক্ষক জুলিয়েটার জন্মদিন ছিলো ৩ তারিখে, ছোট মেয়ের জন্মদিন ছিলো তিন তারিখে, পরিবারে আরেক ভ্রাতুষ্পুত্রী জন্মগ্রহণ করেছেন লং আইল্যান্ডে ২ তারিখে। এতো এতো শুভক্ষণে দাড়িয়েও যেনো ভালো নেই তিনি। নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় বইয়ের বিক্রিবাট্টা ভালো হলেও তা অফলাইনেই সারতে হচ্ছে। অনলাইনে বিক্রি বেশী হলে নাকি লেখকের গেটাপ বাড়ে! বেশ কয়েকটি দেশের ওয়েব পোর্টাল এবং প্রিন্ট পত্রিকায় লেখা ছাপা হলেও গেটাপ সংকটে ভুগছেন তিনি। অনলাইনে বই বেষ্ট হলেও উনার হাতে প্রকাশক একটি কানাকড়িও দেন নি। উল্টো বলছেন, ভাই একটি বইও বেচতে পারি নি। অথচ উনার সামনেই ঢাকার নামীদামী কয়েকটি কলেজের ছাত্রগণ, নানাপেশাজীবিগণ বইমেলায় দলবেধে এসে উনার বন্ধুমঙ্গল কাব্য কিনে নিয়ে গেছেন। অনেক আগেই ষ্টক আউট হয়েছে। এতো তিক্ততার পরে উনার অভিজ্ঞতা আজ অভিজ্ঞানে পরিণত হয়েছে।
ঘরের আগুনে উনার ক্ষ্যাতা ও ক্ষেত দুটোই পুড়ে ছাই। যতোই বলেন, এবার যথেষ্ট হয়েছে আর নয়। তঅবুও তেতে উঠছে। মুক্তি চেয়েও মিলছে না। পুরনো অসুখের মতো এই কর্কট রোগটিও জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। তবুও হেসেখেলে জীবন পার করার চেষ্টা করছেন তিনি। সীমার বাইর হয়ে যাওয়ায় পরিবারের অন্য সবার মাঝে আফসোসের শেষ নাই। কর্কটরোগ আসলে সারে না। একে কেটে ফেলতে হয়।

পুত্র কন্যাগণের স্বপ্নবীজ তিনি বুনে চলেছেন। তাদের কল্পনাশক্তি, সৃজনশীল চিন্তার ধারাবাহিকতাকে চলমান রাখতে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে তৎপর। উনাকে তাই জাপান প্রবাসী লেখক বন্ধু জুয়েল আহসান কামরুল ভাই জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা জানাতে জাপান থেকে মেসেঞ্জারে যুক্ত হন। পদ্মাপারের লেখকের সাথে সুরমা পারের মানুষটির তাই দারুণ সখ্য।

যে জাতি মলমূত্র ছাড়া কিছুই ত্যাগ করতে জানে না সেই জাতির কাছে তিনি তবুও ভালোবাসা পেতে বুক পেতেছেন। কিছু লোক তো ছলনা করবেই। তার বিপরীতে কিছু মানুষের ভালোবাসা উনাকে বাচিয়ে রেখেছে।

কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় যে জীবন চলে যেতে পারতো সেই জীবন শামীম নামের সদাশয় যুবকের মানবিকতা উনাকে বাচিয়ে রেখেছে।
কর্মজীবনের সকল সাথী, শিল্পবিদ্যার সকল সারথি ও সাথিগণ, প্রাণের পড়শীগণ, শুভানুধ্যায়ীগণের কাছে উনার অনেক ঋণ। এরাই উনার ভালোবাসার মানুষ। যে মানুষটি উনার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ছিলো সে শুধু যৌনতাই বুঝেছে, স্বার্থ আর অর্থ বুঝেছে কিন্তু সাধনার সঙ্গী হতে পারে নি। তাই দুজনার দুটি পথ দুদিকেই যাচ্ছে সকল অনিবার্যতাকে মেনে নিয়েই। কবিহৃদয় কি কোনো বাধ ও বাধা মানে? মুক্তবিহঙ্গের মতো কবিরাও উড়তে চায় বলে তার জন্য স্বাধীনতা যিনি এনে দেবেন তার শানে গোমেধ যজ্ঞ পালিত হবে।
উনার ঊনপঞ্চাশ বছর বেচে থাকা বিশাল ব্যাপার। মৃত্যু তাকে তাড়া করে ফিরছে ক্রমাগত। হ্যা, তিনি জানেন সেটি। নিজের সক্ষমতাও তাই অতি অল্প।

মারি ও মড়কে মরে না যাওয়ায় আরেকটি চণ্ডাল জীবন রচনার বাসনায় ল্যাটিন আমেরিকা ভ্রমণের নেশায় উনাকে পেয়ে বসেছে। এ যেনো আ লাইফ অব পী। গুটিপোকার জীবন। শুয়োপোকার জীবন। আর হ্যা পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির লাখান মাথাঘামার বাতিক উনি পেয়েছেন। যেটিকে উনি বাপতি বলে আখ্যা দিয়েছে।

গ্রামের রাস্তায়, শহরের ফুটপাত ধরে খুব সাবধানে পথ চলেন। কিন্তু কিছু তরুণী উনাকে চোখে চোখে রাখতে চায়।

নিজের রূপোলী চুল আড়াল করে রাখতে উনি ন্যাড়া সন্ন্যাসী কিংবা ভান্তের বেশ নিয়েছেন। এই বেশ নিয়েই হয়তো তিনি একদিন বাহামাসে পা রাখবেন। কিংবা ছক্কাপাঞ্জা মারতে মারতে লণ্ডন শহরের ফুটপাত ধরে হাটতে থাকবেন, ম্যানহাটনের রাস্তার ধারে বসে বন্ধু সোহেল গাজীর সাথে কফির কাপে ঝড় তুলবেন। মরক্কোর সুলতানের মুসাফির খানায় হয়তো একরাতের মেহমান হবেন। কিংবা স্পেনের সরাইখানাই রেডওয়ানে ইন্টক্সিকেটেড হয়ে পড়ে থাকবেন। আক্রার বান্ধবী মাম্মী এসির রান্না করা জলফ আর চারকোল তিলাপিয়া গ্রিল আর ব্যাংকার বন্ধু এনিম জনের বাড়িতে ফু ফু আর ছাগলের সুরার স্বাদ নিতে ঘানায় ফিরে যাবেন। অথবা স্লাইস করা গরুর মাংসের সুইয়ার স্বাদ নিতে ল্যাগোসে ফিরে যেতে পারেন। আর ম্যানিলার বাঙুসের স্বাদ নিতে মারিকিনা কিংবা সাম্পালকের বাজারে নানাই নরীর হাত ধরে হাটতে থাকবেন। জীবনের মাঝে জীবিকাকে খুজবেন তিনি। জীবিকার ভেতরে জীবন খুজতে আর তার ধাতে সয় না।
কইলে কইবায় গফ করি
তালগাছ আমার হাতের ছড়ি
গোয়াগাছ দিয়া আমি দাত কিলাল করি

নেপালের থামেল বাজারের রাস্তায় কিছুটা উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরাঘুরি করারও বাসনা রাখেন। বির্তা মোড়ের দিকে ইউটার্ণ নিতে পারলে বন্ধু মাহবুব খুশি হতো। আর রহিম ভাই? আরেক হরিহর আত্মা। উনার বাউণ্ডেলে হবার জপমালা এরাই তো আগলে রেখেছে।

ভাটিবাংলার মানুষের ভালোবাসায় উনি মুগ্ধ। ভাটিবাংলা ও হাওরবন্ধু কমরেড অমরচাদ দাস দাদার ভালোবাসার জন্য উনাকে দিয়ে জাতির বড় কাজ হাওরাঞ্চলে গণহত্যার খোজে শ্যামারচরের হৃদয়বিদারক কাহিনী রচিত হয়েছে। উনার কাজটি মহামান্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক স্বীকৃত।

শ্রদ্ধার মানুষের কাছে উনি আদর্য। মানুষের মাঝখানেই বেচে থাকতে চান।

নারায়নগঞ্জের ফারুক ভাই তার চণ্ডাল জীবনের অগ্নিস্বাক্ষী। ফারুক ভাই কয়, বেশিকিছু ধনসম্পদ করার চিন্তা কইরা লাভ নাই। যেকয়দিন বাচি খাইয়ালইয়া বাচি। আত্মার পরিপুষ্টতা যদি অর্জিত না হয় তাহলে মরে কি শান্তি পাবি।
তাই তিনি মরে গিয়ে বাচতে চান নাকি বেচে থেকেই মরে যেতে চান- এই কূটাভাসটির সুরাহা হওয়া জরুরী এখন।

সিকিম গভমেন্ট বাসে যেতে যেতে বৃষ্টির হাতখানি ধরা থাকতেই থাকতেই বাসেরই ছাদে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি যে কখন নেমে এসেছিলো তা টেরই পাই নি। আমাদের মধ্যনগরের ছেলে বিপুল শিলিগুড়ি শহরে বেশ চুটিয়ে প্রেম আর ব্যবসা করছে বলে ছিলটী মানুষ হিসেবে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়েছিলেন। সিরাজগঞ্জ কড্ডার মোড় থেকে শিলিগুড়িতে হিযরতকারী মধুদার আহবানে ঘরে থাকা দায়। দার্জিজিং আর মিরিকের আকাশে উড়ে চলা মেঘ তিনি ছুতে চান। বৃষ্টির হাতের আঙ্গুলে নিজের আঙুলগুলোর স্পর্শে রোমাঞ্চিত হতে চান তিনি। আহারে! বৃষ্টি, ময়নাগুড়ির মেয়ে। ঠিক যেনো ময়নাপাখির লাখান। খুব টিপে টিপে কথা বলে। অন্নপূর্ণা রেষ্টুরেন্টে চাউমিন খেতে তার খুব ভালো লাগে বলে রহিম ভাই অর্ডার দিলো। মধুদা বিয়ার খেতে চাওয়ায় মাহবুব ভাই সায় দিলো। তিনি বৃষ্টির চোখে চোখ রেখে সুধা পান করে চলেছেন। সখি, এমনও দীর্ঘ বরষামাস আসে নি আগে। মৃদুলয়ে হোটেল লবি থেকে ভূমি ব্যাণ্ডের গান বাজছে, এই ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে, চল পলায়ে যাই…
কিন্তু বেরসিক সন্দেহাকুল বউয়ের রুদ্রমূর্তিতে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায় উনার। প্রেম যেনো তার কাছে হেলেনের চুলের মতো শুভ্র ছাইদানি…

সক্কলকে জন্মদিনের নিরন্তর শুভেচ্ছা।