প্রচ্ছদ

প্রফেসর ড. হারুন রশীদ-এর কবিতা “স্মৃতিতে চির অম্লান ড. গালিব আহসান খান”

  |  ২২:৩৯, আগস্ট ১৭, ২০২১
www.adarshabarta.com

“স্মৃতিতে চির অম্লান
ড. গালিব আহসান খান”

প্রফেসর ড. হারুন রশীদ

(ইউজিসি অধ্যাপক দার্শনিক ড. গালিব আহসান খানের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত)

বিনয়াবনত শ্রদ্ধা তোমার করকমলে
অধ্যাপক ড. গালিব আহসান খান,
‘তুমি রবে নীরবে”-
দর্শন পরিবারের স্মৃতিসৌধে
আমাদের হৃদয়ের গভীরে,
মৃত্যুঞ্জয়ী তুমি-
স্মরণ করি আজ তোমায় সরবে,
আদর্শবান শিক্ষক তুমি
নীতি আদর্শে অটুট অবিচল,
অভিবাদন জানাই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে।

প্রিয় শিক্ষক আমাদের-
শিক্ষার্থী বান্ধব মহান হৃদয় তোমার
জয় করেছ সকল শিক্ষার্থীর মন,
মস্তিষ্ক তোমার ধীর-স্থির শান্ত
কোমল হৃদয়ের অধিকারী,
শিশুসুলভ সারল্য তোমার সহজাত বৈশিষ্ট্য
নিজেতে গুটিয়ে রাখ নিজেকে,
মনোজগতে তোমার সুকুমার বৃত্তি-
মানবিক আবেগ আর
সংবেনশীল অনুভূতিতে গড়া;
প্রতিশ্রুতিশীল নিষ্ঠাবান শিক্ষাগুরু তুমি
সততা নিষ্ঠা নীতি-নৈতিকতায় পরিশুদ্ধ,
মাটির মানুষ তুমি-
ধীরলয়ে চলেছ সদা,
মাটির পৃথিবীর মানবিক মানুষ
আর তার ভরকেন্দ্র মাটি যেন না পায় কষ্ট।

হঠাৎ আকষ্মিকতার ঝর বয়ে গেল
মাটি আর মানুষের মেলবন্ধনে,
বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটলো
আবহাওয়ার কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়া,
সবকিছু এলোমেলো করে
নিষ্ঠুর নির্মমভাবে আঘাত হানলো
মাটির পৃথিবীর মাটির মানুষটিকে,
সর্বনাশা করোনা মিউটেশনের
বৈশ্বিক ভিসিয়াস সার্কেলের অভিঘাতে
বিধ্বস্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো
দর্শন পরিবারের সুদৃঢ় সফটওয়্যার,
ছিঁড়ে গেল হৃদয়ের সফট কপির তার;
বুকে কষ্টের পেরেক গেঁথে
খাঁ খাঁ করা শূন্যতা রেখে
বিদায় নিলে তুমি
কষ্টের বোঝা নিয়ে,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে
খসে পড়লো
আর একটি পরিণত নক্ষত্র,
একটি মহৎপ্রাণ হৃদয়বান হৃদয়।

বিজ্ঞানের দার্শনিক তুমি-
বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পথ প্রদর্শক,
মূলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে
সৃষ্টি করলে ডালপালা আর শাখাপ্রশাখা,
জ্ঞানতাপস তুমি-
রেখে গেলে ভবিষ্যতের জ্ঞানভাণ্ডার,
দার্শনিক চিন্তা তোমার পরিপক্কতা পেল
১৯৮৩ সালে বিজ্ঞানের দর্শন বিষয়ে
পিএইচডি গবেষণায়-
কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে,
বিচারমূলক অনুসন্ধান চালালে
পিটার উঙ্গারের সংশয়বাদ,
কার্ল পপারের মিথ্যায়ন তত্ত্ব
আর পল ফায়ারাব্যান্ডের নৈরাজ্যবাদের;
যৌক্তিক চিন্তন পদ্ধতি প্রয়োগে
স্বকীয় ভাবনার ক্ষুরধার যুক্তিতে
দেখালে এসব মতবাদের সীমাবদ্ধতা,
অবস্থান নিলে নির্বিচারবাদের ঝুঁকিমুক্ত
বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের নিশ্চয়তার পক্ষে,
অধিকন্তু আলো ফেললে তুমি
আধুনিকতা-উত্তরাধুনিকতার দ্বন্দ্ব-বিরাধে,
এ দুয়ের নিশ্চয়তা-অনিশ্চয়তার দোলাচলে
সন্ধান দিলে বিকল্প ভাবনার-
সমন্বয় সাধনের নতুন পথের।

প্রিয় গালিব স্যার আমাদের,
নীতিদার্শনিক তুমি,
নৈতিকতার দার্শনিক তত্ত্বের প্রয়োগে
আদর্শ সমাজের আদর্শ মানুষ তৈরির
ইচ্ছা তোমার প্রবল,
ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাতে
তোমার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হলো
নৈতিক উন্নয়ন কেন্দ্র ২০০৯ সালে;
নৈতিক শিক্ষার বাস্তবায়নে-
সমন্বয়ী ভাবনার স্বকীয়তায়
সন্ধান দিলে তুমি
প্রচলিত মতের বিকল্প পথের,
ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়
উচিত-অনুচিতের দ্বন্দ্বের মিমাংসা করলে
সুখবাদ আর কর্তব্যবাদের সমন্বয়ে,
তৈরি করলে নিজস্ব মত-
সমন্বয়ধর্মী দ্বান্দ্বিক নিরপেক্ষবাদ,
ড. দেবের সমন্বয়ী মানবতাবাদের
পথ পাড়ি দিয়ে,
ড. মতীনের যৌক্তিক চিন্তাপদ্ধতির সিঁড়ি বেয়ে
পৌঁছে গেলে তুমি
নৈতিক মানবতাবাদের মহান আদর্শে,
স্মৃতিতে তুমি অম্লান হয়ে থাকবে
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের আদর্শিক চেতনায়।

লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়