প্রচ্ছদ

জীবন কখনো থেমে থাকে না-সংকট যতই প্রকট হোক, মানুষ বেরিয়ে আসবেই

  |  ১৬:৩০, জুলাই ১৬, ২০২১
www.adarshabarta.com

:: মোঃ নাসির ::

কর্মব্যস্ত জীবনে চারপাশে কত কিছুই ঘটে চলছে। দাপ্তরিক ব্যস্ততা, যাত্রাপথের ঝঞ্ঝাট। সঠিক-বেঠিকের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ছে। নিজের কাজে মনোযোগী হওয়ার সময় কোথায়। আর মনোযোগী না হলে বাধে বিরোধ। একপর্যায়ে শুরু হয় হতাশা। শরীর-মনের ওপর হতাশার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই প্রভাবে জীবনের জটিলতা বেড়েই চলে। তাই যেকোনো কাজে বা বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। আপনার মনোযোগ বাড়াতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বা অতীত পুনর্বিবেচনায় পড়ে না থেকে আপনার অর্জনগুলো নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আপনার মন ইতিবাচক ভাবনায় ব্যস্ত থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থির হয়। কাজেই ধ্যানধারণা বর্তমান পরিস্থিতিতে রেখে ইতিবাচক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন।অতীত আর ভবিষ্যতের পথে চলতে চলতে ভাবনা দিশেহারা হলে এর সুতোয় টান দিন। এরপর চিন্তা করে দেখুন ভাবনাগুলো কোথায় কোথায় গিয়েছিল। ভাবনাচিন্তার গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করুন, যা মনোযোগী হতে বেশ সহায়ক। মেডিটেশনে আপনি এ বিষয়ে ভালো ফল পাবেন।

আমাদের জীবনে নদীর মত এঁকেবেঁকে চলে কোথায় থেকে শুরু আবার কোথায় গিয়ে শেষ হয় একমাত্র আল্লাহই জানেন। জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ স্থানান্তরিত হয় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আল্লাহর উপর ভরসা করে ও মহৎ উদেশ্য নিয়ে এগোলে আল্লাহই সাহায্য করেন, সফলতা আসে মানুষ প্রতিষ্ঠিত হয়।

আমি তিনটি জিনিস শিখেছি—স্বার্থহীন সেবা, সাম্যের ভাব এবং কখনও পরাজয় না মেনে নেওয়া।তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো এবং বাকিটা আললাহ ওপর ছেড়ে দাও।আমি ত্রটাও জানি -কতটা ভালো আছেন সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে আপনি কতজনকে ভালো রাখতে পেরেছেন সেটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমি আরোও জানি মনুষ্যত্ব বোধের জায়গাটাকে বড় করে দেখাই হচ্ছে জীবন। আমাদেরকে তিনটি অভ্যাস একজন পুরুষ বা মহিলাকে ধ্বংস করে: লোভ, হিংসা এবং অহংকার। আমাদেরকে ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা কেউ টয়লেট পেপার নই যে কেউ ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিবেন। মানুষের ভেতর অমানুষের বাস, অমানুষের ভেতর মানুষের বাস।
চেনা কঠিন, বোঝা কঠিন কারণ, মানুষ কিংবা অমানুষ সবাই আবার মানুষ। ধৈর্য ধরো যেটা তোমার জন্য বরাদ্দ সেটা দেরিতে হলেও আসবে ইনশা আল্লাহ। ফয়সলা সবকিছু আল্লাহর হাতে। শত্রু মরে গেলে আনন্দিত হবার কারন নেই। শত্রু সৃষ্টির কারনগুলো এখনও মরেনি। কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা শ্রেয়। অনেক কিছু ফিরে আসে, ফিরিয়ে আনা যায়, কিন্তু সময়কে এবং মৃত্যুকে ফিরিয়ে আনা যায় না। আমি বিশ্বাস করি কৃতজ্ঞতা এবং ঋণ স্বীকার করা মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

আমি আরো বুঝি যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও। আমি এটা বুঝি সময়টা এখন সত্যিই বড় নিষ্ঠুর। আগে জীবন পরে জীবিকা। পৃথিবীতে নিষ্ঠুর মানুষেরাই নিজের প্রয়োজনে কাউকে ব্যবহার করে, আবার প্রয়োজন শেষ হলেই ছুড়ে ফেলে দেয় এটাই বাস্তব। কখনো এতটা বিনয়ী হবেন না যাতে অন্যরা আপনার ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে। বিনয়ী থেকে শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকে আমার দীক্ষা। জীবনে কি পেয়েছি আর কি পাইনি তা না ভেবে, যা কিছু পেয়েছি তাই নিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করি আমি। আপনার বাচ্চাদের ধনী হতে শিক্ষিত করবেন না, তাদেরকে সুখী হতে শিক্ষিত করুন। সুতরাং তারা যখন বড় হবে, তারা দামের চেয়ে জিনিসগুলির মূল্য জানতে পারবে। আমি এটাও দেখেছি যখন মানুষের ক্ষমতা থাকে তখন মানুষ ক্ষমতাবান মানুষের তাবেদারী করে চুপ থাকে আর যখন মানুষের ক্ষমতা থাকে না তখন তার বিপক্ষে কাপুরূষের মতো ঝাপিয়ে পড়ে।

বস্তুগত প্রাচুর্যের পেছনে না ঘুরে নিজের হৃদয়ের ঐশ্বর্যের প্রতি মনযোগী হন। ধনাঢ্য পুরুষ নয় নিজেকে নিজের মান সম্মান ইজ্জতকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন, নিজের চাওয়া-পাওয়া গুলোর ব্যাপারে সাবধানী এবং সচেতন হোন। এই সমাজে চারিপাশের অনেকেই রূপ-যৌবনের বেসাতি করে ক্ষমতাশীল, ধনী কিংবা সাকসেসফুল হয়েছে সত্য কিন্তু শ্রদ্ধা ভালবাসা পেতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। লাখ টাকা দামের ভাড়া বাসায় অসম্মানের জীবনের চেয়ে ভালোবাসার মানুষের সাথে কুঁড়ে ঘরে থাকা অধিকতর সুখ আর সম্মানের।লাক্সারি লাইফে নয়,অল্পতে খুশি হওয়াতে রয়েছে প্রকৃত সু’খ। ‘লো’ভে পাপ,পাপে মৃ’ত্যু’।

আমি বিশ্বাস করি মেধাবী হয়ে গর্ব করার কিছুই নেই। শয়তানও কিন্তু মেধাবী হয়। মনুষ্যত্ব ও সততা না থাকলে সে মেধা ঘৃণিত।বর্তমান সমাজ পারস্পরিক অশ্রদ্ধাবোধ ও নিজের ক্ষমতা জাহির নামক অসুখে আক্রান্ত। শক্তি, অহংকার ও ক্ষমতা কোনটাই চিরস্থায়ী নয়। সময় সবচেয়ে বড় নিয়ামক। আজ যে রাজা কাল সে ফকির॥আমি মনে করি অন্যায়কারী কখনই আমার কাছে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। অন্যায়কারী আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমার স্পষ্ট বার্তা অন্যায় যে করবে তার প্রতি কোনোরকম অনুকম্পা নয়। বরাবরের মতোই অন্যায়কারীর প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি বজায় থাকবে।করোনার বিষাক্ত ছোবলে অনেকের মতো অনেকে ও পরপারের পথে পাড়ি জমিয়েছেন। মৃত্যু সত্য, মৃত্যু জীবনের অনিবার্য পরিণতি; শেষগন্তব্যের পথে অভিযাত্রা। সত্যি বেঁচে থাকাটা যেন এক পরম বিষ্ময়। আমাদের প্রতিদিন মৃত্যু হয় তারপর সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আবার ঘুম থেকে জেগে উঠি। আমি মনে করি ঘোর অন্ধকারে আলোর ঝলক হলো করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার এবং প্রয়োগ। আমি এটাও দেখেছি বাংলাদেশে-দেশে চোরদের পুরস্কৃত করা আর নায়কদের তিরস্কার করার দৃষ্টান্ত নতুন নয়! আরো আমি জানি মানুষ সৎ ও অসৎ উভয় ব্যক্তিকেই মনে রাখে-তবে একটা শ্রদ্ধা ও আরেকটা ঘৃনার সাথে।

ক্ষমতা কারো চিরকাল থাকে না। ক্ষমতায় থাকাকালীন চারপাশে ভিড় করে থাকা সুখ-পাখীরাও ক্ষমতার পালা বদলে উড়ে চলে যায় নতুন ক্ষমতাসীনের কাছে।ত্রটা আমার দেখা। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকাকে আমি সফলতার চাবিকাঠি মনে করি। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবী আবার সাধারণ অবসহায় ফিরে আসবে। প্রত্যেক সংকটের পেছনে সুযোগ লুকিয়ে থাকে-মনে রাখতে হবে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানের পথ আমাদেরকেই বের করতে হবে। অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ কথাটি মনে করিয়ে দেন। আমি আরো মনে করি সবকিছুতে উৎসাহের সাথে সাথে কাজ করো, কিন্তু মনে রেখ কখনো সহিসংতা কোন উত্তর হতে পারে না এবং এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।পরিশ্রম করুন, নিজ যোগ্যতায় চলুন, প্রত্যাশার সংকোচন ঘটান, ঋণাত্মক মানুষ এড়িয়ে চলুন আর আত্ম সন্তুষ্টি রাখুন! নিজেকে নিজেই মোটিভেইট করুন।

অমুক কত সুখী তা না দেখে আপনি নিজে কতটায় সুখী সেটিকে বিবেচনায় নিন, দেখবেন জীবন অনেক রঙিন হয়ে উঠবে! অন্যের কাছে সেরা না হয়ে নিজের কাছে সেরা হয়ে উঠুন। অন্যের বাহবায় কিইবা আসে যায় যদি আপনি নিজে সুখী না থাকেন? নিজের অহংবোধে আঘাত করার সুযোগ কাছের মানুষকেও দেবেন না!

স্বপ্ন দেখুন, স্বপ্নের পথে হাঁটুন! স্বপ্ন ভেঙে গেলে, পরের স্বপ্নকে লালন করে এগিয়ে যান, তবুও হাঁটুন তা যেন থেমে না যায়! মানুষকে হাঁটতেই হয় স্বপ্নকে স্পর্শ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত!

লেখক: মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকায় বসবাস করছেন