প্রচ্ছদ

সিলেটে ভূমিকম্পের ৫টি সক্রিয় ফল্ট

  |  ২২:১৭, জুন ১৭, ২০২১
www.adarshabarta.com

আদর্শবার্তা ডেস্ক :

সিলেট দেশের সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে ৫টি সক্রিয় চ্যুতি (ফল্ট ) রয়েছে। এ কারণে সিলেটকে ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহ রেট্রোফিটিংসে’র (পুনঃনির্মাণ) মাধ্যমে ভূমিকম্প সহনীয় করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ইতিমধ্যে দেশের সিলেট ৬টি সিটি করপোরেশন ও ৩টি জেলার ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। ভূমিকম্পসহ যেকোনো দুর্যোগ থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় কন্টিনজেন্সি (আকস্মিকতা) প্ল্যানও তৈরি করা হয়েছে। ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড হালনাগাদ করণের লক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মোঃ এনামুর রহমান বৃহস্পতিবার সিলেটে আয়োজিত “ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, এখানে নকশা অনুমোদন ছাড়া কোনো ভবন যাতে গড়ে না উঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর যেভবনগুলো ইতোমধ্যে নির্মিত হয়ে গেছে সেগুলো ভ’মিকম্প সহনীয় কি না তা পরীক্ষা করাতে হবেৃ। যেগুলো ভূমিকম্পসহনীয় না সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সচেষ্ট হতে হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন এর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান, জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন, আবহাওয়া অফিসের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ, সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের কর্মকর্তা লে. কর্ণেল মিজান, গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, বুয়েটের অধ্যাপক তাহমিন এন হোসেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) এর অধ্যাপক ড. তাহামিদ এম আল হোসাইন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জহির বিন আলম ও ড. শারমিন রেজা চৌধুরী, জাইকার প্রতিনিধি নাওকি মাথসুমুরা প্রমুখ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার পূর্বাভাস দেয়ার উপায় এখনো বের করা যায়নি। আমাদের দেশের প্রধান প্রধান শহর গুলোতে মানুষ বাড়ার পাশাপাশি আবাসিক-অনাবাসিক স্থাপনা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু এসব স্থাপনা কতটা মানসম্পন্ন, বড় ধরনের ভূমিকম্পে সেগুলো টিকে থাকবে কিনা এই আশঙ্কা প্রবল। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই আমাদের বড় শহরগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে দেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়না। ফলে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পও বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। আর বড় ধরনের ভূমিকম্প ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। তাই ভূমিকম্পের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের অবকাঠামো দূর্যোগ মোকাবেলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন তার বক্তৃতায় বলেন, বর্তমানে দেশে ভূমিকম্প পরিমাপের জন্য ১০ টি স্টেশন রয়েছে। জাপান থেকে ভূমিকম্প ও সুনামি বিষয়ে (জাপানের) টোকিও’র গ্রিপস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে ২ বছরের কোর্স সমাপ্ত করে ৪ জন বিজ্ঞানীর মধ্যে ১জন সিলেট স্টেশনে কর্মরত আছেন।

তিনি জানান, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগে দ্রুত উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অ্যাকোয়াটিক সি সার্চবোট, মেরিন রেস্কিউ বোট, মেগাফোন সাইরেনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সহজ করার জন্য আরো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সভায় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট মহানগরে ৪১ হাজার ৯৯৫টি ভবন রয়েছে। সিডিএমপি’র জরিপে ৩৮% হতে ৪৫% ওভারহেংগ ভবন রয়েছে এই নগরে। বিদ্যমান অবকাঠামো সমূহের ভূমিকম্প সহনীয় করার লক্ষ্যে বর্তমানে ভবনের ভালনার এবিলিটি নিরুপন, ভূমিকম্প ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ইমিডিয়েট একশন প্ল্যান তৈরী করা জরুরী। জাইকার সহায়তায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারী কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবনকে রেকট্রোফিটিং করার কাজ চলমান রয়েছে। ১৯৯৩ সালে বিল্ডিং কোড চালু হওয়ার আগের এবং পরের নির্মিত ভবন ও বিল্ডিং কোড অনুসরন করে ডিজাইনকৃত ভবনের গুনগতমান নিরুপন করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মাষ্টার প্ল্যানে ল্যান্ড ইউজ জোনিং করা আছে। কিন্তু রিসক সেনসিটিভ ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান আমাদের নেই। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ভূমির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে নগরবাসীর রিস্ক বেড়ে যাচ্ছে। দুর্যোগ ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য আমাদের রিস্ক সেনসিটিভ ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান তৈরী প্রয়োজন। নগরীর বিভিন্ন জোনে সয়েল টেষ্ট করে রিস্ক সেনসিটিভ ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরীর মাধ্যমে কত তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা সম্ভব, তা নিশ্চিত করা যাবে। কারণ, ভবনের মালিকগণ যে সয়েল টেষ্ট রিপোর্ট আমাদের নিকট জমা দেন, তা কতটুকু সঠিক নিশ্চিত হওয়া যায়না। তাই, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান ভবনের রেপিড ভিজুয়াল স্কিনিং প্রিলিমিনারী ইঞ্জিনিয়ারিং এসেসমেন্ট ও ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং এসেসমেন্ট এর মাধ্যমে ভবনগুলির ঝুঁকি নিরুপন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য এখন সময়ের দাবী।

এদিকে, ৫টি ফল্টের বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জহির বিন আলম বলেন সিলেটে ৫টি সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। ফল্টগুলো হলো, ডাউকি ফল্ট, বার্মিং ফল্ট, রশিদপুর হবিগঞ্জ ফল্ট এবং সিলেট নগরীর আশপাশে ২টি ফল্ট। তবে নগরীর আশপাশের দুটি ফল্ট ২টি এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। গত ২৯ এবং ৩০ মে সিলেটে ৭ দফা এবং ৭ জুন আবারও ২ দফা ভূমিকম্প হয় সিলেটে। এতে সিলেট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভূমিকম্প আতঙ্ক দেখা দেয়।

দফায় দফায় এই ভূমিকম্পের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই সভার আয়োজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এতে সহযোগীতা করে সিলেট জেলা প্রশাসন ও জাইকা। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে জানান, সিলেটে ঘনঘন ভূমিকম্পের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে।

সৃত্র : দৈনিক জালালাবাদ