প্রচ্ছদ

ইসলামী সংগীতে বিশ্বসেরা বৃটেনের সামি ইউসুফ ও ইউসুফ ইসলাম

  |  ১৯:১৪, মার্চ ২৮, ২০২১
www.adarshabarta.com

সাঈদ চৌধুরী :

বিশ্বব্যাপী ইসলামী সংগীত জগতের আইকন হিসেবে খ্যাত সামি ইউসুফ ইউসুফ ইসলাম।বৃটেনের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা আলোকিত নাম। সামি ইউসুফের মত এত প্রগাঢ় পুরুষ কণ্ঠসত্যিই বিরল। আর এজন্য তিনি মুসলিম বিশ্বে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন। অপরদিকে আছেনএক সময়ের পপ সংগীত জগতের আইকন বহুল আলোচিত ইউসুফ ইসলাম (ক্যাট স্টিভেন্স )অসামান্য সুর আর মায়াময় কণ্ঠের যাদুতে তার প্রতিটি গান মুগ্ধ করে লক্ষ লক্ষ সংগীতঅনুরাগীদের৷

২০০৩ সালে জাগরণ (AWAKENING RECORD) এর ব্যানারে আল মুআল্লিম (AL MU’ALLIM) নামে প্রকাশিত হয় সামি ইউসুফের প্রথম অ্যালবাম। তখন তার বয়স ছিল মাত্র২৩ বছর। তিনি বাস করতেন পশ্চিম লন্ডনের ইলিং এলাকায়। তার বাবা রাদমানেশ ছিলেনবিখ্যাত ইরানি কবি, গীতিকার সুরকার। বিশ্বব্যাপী মূল ধারায় ইসলামী সংগীতের চাহিদানিয়ে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। সামি ইউসুফের প্রথম আটটি ট্র্যাকসংবলিত আলমুআল্লিম অ্যালবামটির সংগীত পরিবেশনা সুর সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই। গানেরপ্রযোজনা যখন হল, তখনও ভাবেননি এটা তাকে বিশ্বময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যাবে।

আল মুআল্লিম অ্যালবামটি বের হওয়ার সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা দক্ষিণপূর্বএশিয়াতে ব্যাপক সাড়া জাগে। দ্রুত হিট করে মুসলিম বিশ্বে, বিশেষ ভাবে তুরস্ক মিসরে।এরপর তা সর্বত্র ব্যাপকতা লাভ করে। অল্প দিনে বিশ্বব্যাপী অ্যালবামটির বিক্রি সাত মিলিয়নকপি ছাড়িয়ে যায়। এই অ্যালবামের শেষ ট্র্যাক (SUPPLICATION) ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হলিউড সিনেমায় (THE KITE RUNNER) ব্যবহৃত হয়।

এদিকে ২০০৫ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় অ্যালবাম মাই উম্মাহ (MY UMMAH) তার জন্য বয়েনিয়ে আসে অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা। এই অ্যালবামের হাসবি রাব্বি (HASBI RABBI) গানটি মিসরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অ্যালবামটি চার মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রিহয়। তারপর বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, রোলিং স্টোনের মতো পৃথিবীর খ্যাতনামামূলধারার প্রচার মাধ্যম গুলো তাকে নিয়ে লেখালেখি শুরু করে।

২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন সামি ইউসুফকে ইসলামের বৃহত্তম রকস্টার (ISLAM’S BIGGEST ROCKSTAR) আখ্যা দেয়। দ্য গার্ডিয়ান তাকে মধ্য প্রাচ্যের বৃহত্তম বৃটিশ তারকা(BIGGEST BRITISH STAR IN THE MIDDLE EAST) বলে আখ্যায়িত করে। আলজাজিরা বলে ইসলামিক পপের কিং (KING OF ISLAMIC POP) সঙ্গীতে বিশেষ অবদানরাখার জন্য ২০০৯ সালে রোহাম্পটন ইউনিভার্সিটি  (UNIVERSITY OF ROEHAMPTON) তাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এরই মাধ্যমে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জায়গা করে নেন মার্ক টোয়েন, জে কে রোলিং, রবার্ট ফ্রস্টদের কাতারে।২০০৯ সালে তার নাম ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায়।

অপরদিকে পপ সংগীতের আইকন ক্যাট স্টিভেন্স ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসলাম ধর্মগ্রহন করে ইসলামী সংগীতের জগতে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেন। ইউসুফ ইসলাম হিসেবে মুসলিমবিশ্বে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। চির সবুজ গীতিকার, সুরকার গায়ক ক্যাট স্টিভেন্স নতুনভাবে জাগিয়েছেন তার অনুরাগীদের। এমনিতেই ষাটের মাঝমাঝি থেকে সত্তরের শেষ অবধিতার পপ সংগীত সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বব্যাপী৷ সাফল্য জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি।স্বপ্ন আর ভালবাসা নিয়ে গাঁথা তার ব্যালাড আঙ্গিকের গান আজো মুগ্ধ করে অসংখ্য সংগীতঅনুরাগীদের৷

ক্যাট স্টিভেন্স ১৯৪৮ সালে লন্ডনে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা গ্রীকসাইপ্রিয়ট মা সুইডিশ৷আসল নাম স্টিভেন ডেমেত্রি জর্জিও৷ ১৮ বছর বয়সেআই লাভ মাই ডগএর মধ্য দিয়ে পপসংগীতাঙ্গনে তার প্রথম আত্মপ্রকাশ৷ এরপর থেকেই একের পর এক হিট অ্যালবাম বেরোয়৷একাধিক বার শ্রেষ্ঠ গায়ক গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন পপসংগীতের এক বহুল আলোচিত আইকন৷

ইউসুফ ইসলাম ১৯৮১ সালে লন্ডনে ইসলামিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল মুসলিমকমিউনিটির জন্য নিয়ামত। গত ২০ বছর ধরে এটার প্রচার প্রসারে সচেষ্ট রয়েছি। বর্তমানেএই ধারায় আরো বেশ কিছু ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ইউসুফ ইসলাম বৃটেনে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি সেবা কর্মেও সম্পৃক্তরয়েছেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবিক সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করে চলেছেন৷মানবিকতা শান্তির পৃষ্ঠপোষক হিসেবেওয়ার্লড অ্যাওয়ার্ড‘, ‘ম্যান ফর পিস অ্যাওয়ার্ডসহআরো বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভুষিত হয়েছেন সংগীত শিল্পী ক্যাট স্টিভেন্স ওরফে ইউসুফইসলাম৷

ইসলামী সংগীতের দেদীপ্যমান নক্ষত্র সামি ইউসুফ ইউসুফ ইসলাম বিশ্বব্যাপী ইসলামীসংগীত জগতের উজ্জল নক্ষত্র। তারা যখন  লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে হেঁটে কোন সাংস্কৃতিকঅনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন, তখন উৎসুক হয়ে অপেক্ষায় থাকেন টিভির সামনের লক্ষ লক্ষ দর্শক।নগরচত্বর, স্টেডিয়াম থেকে জনাকীর্ণ কনসার্ট হল সর্বত্রই তারা সমভাবে আকর্ষণীয় এবংসমাদৃত। তাদের অপার্থিব পবিত্র ধ্বনি তরঙ্গ আর হৃদয়মাখা কন্ঠের সুরলহরি অপার মুগ্ধতাছড়িয়ে দেয়।

আমার অত্যন্ত প্রিয় কাছের এই দুই তারকা শিল্পীকে নিয়ে মাহে রামাদ্বানে সুপরিসরআলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।