প্রচ্ছদ

রেষ্ট ইন পীস, আর্ট ইন হেভেন

  |  ০১:৪৭, মার্চ ০৪, ২০২১
www.adarshabarta.com

:: সাইফুর রহমান কায়েস ::

লেখক মুসতাক আহমেদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিরাপত্তার সংজ্ঞা বদলে গেছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব্রে মৃত্যুবরণ করে কারাগার থেকে লাশ হয়ে বের হবার নাম নিরাপত্তা। এ এক আজব দেশ। এজন্যই দেশখান স্বাধীন হয়েছিলো। লেখার, বলার, চলার স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হলো আইসিটি আইন। এখন এই খড়্গ থেকে কোনোভাবেই মুক্ত নই বলে দর্জিবাড়ি গিয়ে কাফনের কাপড় বানিয়ে নিয়ে এসে সাথে রাখার কথা চিন্তা করছি।

এইদেশে লেখক হওয়া, মুক্তবুদ্ধি চর্চা করা অপরাধ।! ? রাষ্ট্র তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একজন লেখকের হত্যাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ায় এই রাষ্ট্রটির প্রতি আমাদের আস্থার যথেষ্ট সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি আরো বেশি বেগবান হয়েছে। গণতন্ত্র হরণ করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না ।

স্বৈরাচারী এরশাদ, বিগত দিনে আইয়ূব খান, ইয়াহিয়া খান কেউ টিকে থাকতে পারে নি- এই সরকার তার ফ্যাসিবাদী চরিত্রটি স্বোদ্যোগে উণ্মোচন করায় অস্তিত্বে টান পড়ে গেছে। গণদাবী জোরদার হচ্ছে, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হচ্ছে, বিশিষ্ট জনেরা , বন্ধুরাষ্ট্রের কুটনীতিকগণ উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি, জরুরী আলোচনায় বসেছেন। একজন লেখক হত্যার মধ্য দিয়ে সরকার নিজের কবর নিজেই রচনা করতে যাচ্ছে। দিনে দিনে গণমানুষের সংক্ষুব্ধতা আরো বাড়বে বৈ কমবে না। জুলুমবাজ ,লুটেরা, ঋণখাতক, অর্থগৃধ্নু ও দেশের সম্পদ পাচারকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিলাসী ও নিরুদ্বিগ্ন জীবন যাপন করছে দেশের ভিতরে ও বিদেশে আর লেখককে মতপ্রকাশের দায়ে কারাগারেই মরতে হয়েছে। তাকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। দশমাসে ছয়বার আদালতের কাছে জামিন চেয়েও না পাওয়ায় নাগরিকেরা আইনের সহানুভূতি পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।

বিচারব্যবস্থা যে স্বাধীন নয় সেটি প্রমাণিত হয়েছে। আরো ষ্পষ্ট হয়ে উঠে যখন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। আইসিটি আইনের সদ্ব্যবহার করার বদলে অপব্যবহার বেশি হওয়ায়, নাগরিকসমাজ হেনস্তা, জেলজুলুম ও হত্যার শিকার হওয়ায় একে কোনোভাবেই জনবান্ধব বলা যায় না। এটি কালো আইন। শালিস মানি তালগাছ আমার করতে গিয়ে এই আইনটি জারীর মাধ্যমে সরকারের, রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী চরিত্রটির ভয়ংকর ,দানবীয় রূপটিই আমরা দেখতে পাই।

এই আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্র লুটের মহড়া চলে, দুর্নীতির দুর্বৃত্তায়ন ঘটে, বিরুদ্ধবাদ ধর্ষিত হয়। মানুষের মুখে কুলুপ লাগানোর মহতী(?!) উদ্যোগ বাস্তবায়নের নগ্ন প্রয়াস চলছে। দেশব্যাপী সার্কাসের মহড়া চলছে। দুর্নীতির মোচ্ছব চলছে। অথচ কথা বললেই দোষ । এইদেশ বারে বারে কেনো অহল্যা হবে? দেশীয়চাল চলনে, নতুন রূপে ফ্যাসিবাদী চরিত্রগুলো আমাদের রাতের ঘুম হন্তারক, প্রাণসংহারক হয়ে দেখা দিচ্ছে । ফলে এই রাষ্ট্র, এই সরকারের কাছে কেউ নিরাপদ নন। আমি এখন নিজেই নিজের জন্য বলি,রেষ্ট ইন পীস, আর্ট ইন হেভেন।

সাইফুর রহমান কায়েস

প্রধান সম্পাদক

শব্দকথা টোয়েন্টিফোর ডটকম