প্রচ্ছদ

‘খাসিয়া’ সেজেছিলেন আকবর, পালাতে বলেছিলেন ‘সিনিয়র অফিসার’

  |  ১১:৪১, নভেম্বর ০৯, ২০২০
www.adarshabarta.com

আদর্শবার্তা ডেস্ক :

মুখে দাড়ি। পরনে খয়েরি রঙের ফুল হাতা শার্ট। নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখা কোমর। প্রথম দর্শনে কারোই বুঝতে পারার কথা না যে তিনি সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির একসময়ের ইনচার্জ ও বর্তমানে বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞা। পালিয়ে ভারতের খাসিয়াপল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার কারণ অনেকটা কান্নার সুরে বলছিলেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে একজন সিনিয়র অফিসার পালাতে বলেছিলেন। তাই আমি পালিয়েছি। আমি মারিনি ভাই…।’

সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ডোনা এলাকা থেকে আকবরকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে সোপর্দ করার আগে একটি ভিডিওতে এ রকম চিত্র দেখা গেছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

দুই মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী দুটো ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রথম ভিডিওটি দুই মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের। এতে দেখা গেছে, আকবরকে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা। দুই হাত পেছনে রেখে রশি টাঙিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। এ সময় আকবর বলেন, ‘আমাকে একজন সিনিয়র অফিসার বলেছেন, তুমি চলে যাও, দুই মাস পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসবা।… আমি মারিনি ভাই।’

দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা গেছে আকবর বসা। ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড স্থায়ী এই ভিডিওতে শোনা যায়, আকবরকে নাম জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। এ সময় আকবর বসা ছিলেন। নাম কি? জানতে চাওয়ায় আকবর দুই হাত জোড় করে বলেন, ‘আমি আকবর’। ‘তুমি আকবর, তুমি তো পালাইয়া আসছো, হত্যা করছো?’জবাবে আকবর বলেন, ‘না, ভাই আমি মারিনি। হাসপাতালে নিয়েছি।’এ সময় সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মাইরও না। এইটা বাংলাদেশি।…বিচার হবে। বিচার করবে তাঁরা…।’

আকবর ‘আমি বাঁচব না ভাই…’ বলে প্রলাপ বকছিলেন। আকবরকে নাম জিজ্ঞেস করার সময় হাতজোড় করে থাকতে দেখা যায়। যারা তাঁকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন, তাঁদের কথাবার্তা বাংলা হলেও খাসিয়াদের মতো টান ছিল। আর আকবরের গলায় পুঁথির মালা ছিল। অনেকটা খাসিয়া যুবকের মতো সাজে ছিলেন আকবর। কথাবার্তার একপর্যায়ে পানির বোতল এগিয়ে দেওয়া হয় আকবরকে।

ভিডিওতে যে স্থানে আকবরকে দেখা গেছে, সেটি পাহাড়ি এলাকা। ঝোপঝাড় ও ঝরনা মাড়িয়ে আকবরকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর আকবরকে বাংলাদেশের পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশে সোপর্দ করার আগে আকবরকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধরা হয়। এরপর রশি দিয়ে বেঁধে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

আকবরের এই ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আকবরকে পেয়েছি সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশ সীমানায়। এর আগে আকবর কোথায় ছিলেন, এ সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য হচ্ছে। আকবর ভারত পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।’

ডোনা সীমান্ত এলাকার ওপারে মেঘালয় রাজ্য। পাহাড়ের পাদদেশজুড়ে ভারতের খাসিয়াপল্লি। সিলেট নগরীর আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেনসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিন থেকে তিনি লাপাত্তা ছিলেন।

গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রের ধারণা, আকবর পালিয়ে ভারতে চলে যান। সিলেটের আরেক সীমান্ত এলাকা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমা সীমান্ত হয়ে আকবর খাসিয়াপল্লিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং দফায় দফায় কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সীমান্ত এলাকার ওপারে ভারতের খাসিয়াপল্লিতে অবস্থান করছিলেন।
আকবরকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে আকবরের অধীনস্থ বন্দরবাজার ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ২২ অক্টোবর। এ সময় পুলিশের সদর দপ্তরের তদন্তে আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী একজন সিনিয়র অফিসারের নামও আসে। ধরার সময় ভিডিওতে আকবর একাধিকবার সিনিয়র অফিসারের পরামর্শে পালানোর কথা বললেও কোনো নাম বলেননি।

জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার বি এম আশরাফ উল্যাহ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আকবরকে গ্রেপ্তারকারী জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কে তাঁকে পালাতে বলেছিলেন, এই বিষয়সহ সার্বিক ব্যাপারে আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

(সুত্র : প্রথম আলো)।